কূটনৈতিক রিপোর্টার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার
ঐতিহাসিক বৈঠক হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে। নিউ ইয়র্কে ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকটি হয় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে। জাতিসংঘ ভবনে অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের আপৎকালীন সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান। রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বার্তায় এ তথ্য জানায়। বৈঠককালীন ড. ইউনূস ও বাইডেনের কুশল বিনিময়ের ছবিও প্রচার করে প্রেস উইং। বার্তায় বলা হয়, বৈঠকে ড. ইউনূস বিগত সরকারের আমলে সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা ও বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা জো বাইডেনকে জানান। প্রফেসর ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, দেশ পুনর্গঠনে তার সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে। এসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেকোনো সাহায্যে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। বাইডেন বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি দেশের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাহলে তাদেরও (যুক্তরাষ্ট্র সরকার) পূর্ণ সহযোগিতা করা উচিত। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লব চলাকালীন ও এরপরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবি-সংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ শীর্ষক আর্টবুক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উপহার দেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার একান্ত বৈঠকের তেমন নজির নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তো এমন বৈঠক বিরল। মঙ্গলবার সেই বিরল বৈঠকই অনুষ্ঠিত হয় নিউ ইয়র্কস্থ জাতিসংঘের সদর দপ্তরে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এদিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বুকে টেনে নেন। হাতে হাত রেখে বলেন, বাংলাদেশের সংস্কারের যে লক্ষ্য নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ঠিক করেছেন, তাকে বাস্তবে রূপ দিতে সব ধরনের সহযোগিতা করবে হোয়াইট হাউস। বাংলাদেশ সময় আজ রাতে প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে দুই শীর্ষ নেতার বিরল বৈঠকের ছবি ও সংবাদ প্রচার করা হয়। নিউইয়র্কে কাজ করেছেন এবং এখন কাজ করছেন, বাংলাদেশের এমন পাঁচজন কূটনীতিক বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাধারণত জাতিসংঘ অধিবেশনে তাঁর নির্ধারিত বক্তৃতার দিন সকালে নিউইয়র্কে পৌঁছান। বক্তৃতার পর অধিবেশনে আসা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক একাধিক কূটনীতিকের মতে, প্রথা ভেঙে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক প্রতীকী অর্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংক্ষিপ্ত হলেও দুই নেতার বৈঠক এই বার্তাই দিচ্ছে যে হোয়াইট হাউস বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতায় প্রস্তুত।
স্মরণ করা যায়, ৭৯তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বিতর্ক সেশন শুরু হয়েছে মঙ্গলবার সকাল থেকে। ওই আয়োজনে অংশ নিতে প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার রাতেই নিউ ইয়র্ক পৌঁছান। আরও খোলাসা করে বললে, বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের সূচি ঠিক হওয়ায় পূর্ব-নির্ধারিত সফরসূচী একদিন এগিয়ে ২৩শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে যান তিনি। অবশ্য তার অন্য কর্মসূচিও এগিয়ে আনা হয়। আগামী ২৭শে সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দিলেন ড. ইউনূস
এদিকে নিউ ইয়র্ক সফরের প্রথম দিনেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়, যেখানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগদানকারী বিশ্ব নেতাদের স্বাগত জানান সংস্থাটির মহাসচিব। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ড. ইউনুস ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বিরাজ সিং রূপন এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাই কমিশনার ভলকার টুর্কসহ অন্যান্যদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে ড. ইউনূস ৭৯তম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
0 Comments