ওয়াজ মাহফিল সংস্কার হোক
ওয়াজ মাহফিল আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এর মাধ্যমে ইলম অর্জন ও ইসলাম প্রচারের সুযোগ হয় এবং আয়োজকরা সাওয়াব লাভ করেন। তাই এই আয়োজনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম নিয়ত শুদ্ধ করতে হবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আয়োজনে শরিয়তবিরোধী কিছু করা উচিত নয়। টাকার জন্য বক্তাদের নামের ওপর সমাজের বেনামাজি, সুদখোর বা অন্যের হক নষ্টকারী অতিথি করার প্রথা বন্ধ করতে হবে, বিশেষ করে তাদের আলেমদের আলোচনা থামিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। মাহফিল আয়োজনের জন্য নিজেদের অর্থ ব্যবহার করা উচিত, এবং যেখানে সেখানে বা শিশুদের দিয়ে চাঁদা তোলা ইসলামের সৌন্দর্যের পরিপন্থী। ভাইরাল বক্তা, ইউটিউব বা ফেসবুকের ভিউ বৃদ্ধির জন্য শ্রোতা আকর্ষণের মানসিকতা ত্যাগ করে তাকওয়াবান আলোচকদের দিয়ে মাহফিল পরিচালনা করতে হবে। আমাদের মসজিদের ইমামকে যখন বেতন দিতে কষ্ট হয়, তখন তিন-চার লাখ টাকা খরচ করে ওয়াজ মাহফিল আয়োজন কতটা যৌক্তিক, তা ভেবে দেখা উচিত।
মাইক ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল, হাসপাতাল এবং আবাসিক এলাকা বিবেচনা করে মাইক ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে, যাতে রাতে এবং পুরো মহল্লায় শব্দ ছড়িয়ে অসুস্থ রোগী, শিক্ষার্থী বা ছোট শিশুদের কষ্ট না হয়। রাস্তা আটকিয়ে বা অন্যের কষ্ট দিয়ে মাহফিল আয়োজন থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে মুসলমান নিরাপদ থাকে, সেই প্রকৃত মুসলিম।” (সহিহ বুখারি)
আলোচকরা দাওয়াত গ্রহণের আগে আয়োজকদের সম্পর্কে খোঁজ নেবেন এবং অর্থের উৎসসহ উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন। সুন্দর ও সহজ ভাষায় ইসলাম প্রচার করতে হবে। মাইক পেলেই ভাইরালের উদ্দেশ্যে অন্যের সমালোচনা, পরনিন্দা, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কথাবার্তা, কুরুচিপূর্ণ ভাষা, গান, ধমকি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ইসলাম নরম ও সাবলীল ভাষায় প্রচারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
ব্যক্তিগত মতাদর্শ, দলীয় প্রচারণা বা লোকের প্রসংশার আশায় নয়; বরং আল্লাহর নিয়ামতের জন্য শুকরিয়া, পাপ থেকে বেঁচে থাকা, ইলমে তাসাউফ, নবী-রাসুল ও সাহাবিদের জীবনী, মৃত্যু, কবর, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করে মানুষের আত্মার সংস্কার করতে হবে। এভাবেই মানুষকে প্রকৃত অর্থে ইসলামের নূর দিয়ে আলোকিত করা সম্ভব, যা সমাজ গঠনে সহায়ক হবে। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এমন বক্তব্য পরিহার করে হিকমত ও নম্র ব্যবহার দিয়ে দাওয়াত দিতে হবে।
আল্লাহতায়ালা বলেন, “তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করো এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সঙ্গে বিতর্ক করো।” (সূরা নাহল: আয়াত ১২৫)
ওয়াজ মাহফিলের শ্রোতাদের গুরুত্ব অসীম। শ্রোতারাই মাহফিলের সৌন্দর্য। ভাইরাল বক্তা বা কমেডির মাধ্যমে আলোচনা করা শ্রোতাদের সময়ের অপচয়। ভাইরাল নামক ভাইরাসের পেছনে না ছুটে সওয়াব ও আমলের নিয়তে মাহফিলে উপস্থিত হতে হবে। যা শোনা হবে, তা আমলে আনতে হবে এবং অন্যদের জানাতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আমার পক্ষ থেকে একটি হাদিস হলেও মানুষের কাছে পৌঁছে দাও।” (সুনানে তিরমিজি)
0 Comments