আল্লাহ তাআলার প্রতি বান্দার কৃতজ্ঞতা অত্যন্ত মহৎ ইবাদত। বান্দা যখন শোকর প্রকাশ করে, আল্লাহ তাতে সন্তুষ্ট হন, আর অকৃতজ্ঞ হলে অসন্তুষ্ট হন। কৃতজ্ঞতা মুমিনের বিশেষ গুণ এবং নবীদের শিক্ষা ও পথ। ঈমান এবং তার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা আল্লাহর প্রতি শোকর আদায়ের নানা রূপ প্রকাশ করে। এর বিপরীতে, কুফর, শিরক ও পাপাচার আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞতার ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়ার আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব, আর আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত ১৫২)

আল্লাহ তাআলা বান্দার কৃতজ্ঞতাকে পছন্দ করেন এবং পবিত্র কোরআনে কৃতজ্ঞ বান্দাদের জন্য তার সন্তুষ্টি ও শাস্তি থেকে মুক্তির উপায় বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের শাস্তি দিয়ে কী করবেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও এবং ঈমান আনো?’ (সুরা নিসা, আয়াত ১৪৭)

শোকরের প্রতিদান ভালো, আর অকৃতজ্ঞতার পরিণতি মন্দ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, তবে আমি তোমাদের আরও বেশি দেব, আর অকৃতজ্ঞ হলে আমার শাস্তি কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত ৭) পরকালে কৃতজ্ঞদের জন্য আল্লাহ বিশাল প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কৃতজ্ঞদের প্রতিদানে ভূষিত করবেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৫)

মহানবী (সা.)-এর জীবনে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা অনন্য উদাহরণ। তিনি আল্লাহর অন্যতম কৃতজ্ঞ বান্দা ছিলেন এবং উম্মতকে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের উত্তম শিক্ষা দিয়েছেন। হজরত মুগিরা ইবনে শোবা (রা.) বলেন, নবী (সা.) দীর্ঘ সময় নামাজ পড়তেন, যাতে তার পা ফুলে যেত। প্রশ্ন করা হলে তিনি বলতেন, ‘আমি কি আল্লাহর অতি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ১১৩০; সহিহ মুসলিম, হাদিস ৭১২৫)

আবু বাকরা নুফাই ইবনুল হারিস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) যখন আনন্দের সংবাদ পেতেন, তখন আল্লাহর কৃতজ্ঞতায় সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৭৭৪)

আল্লাহর সাহায্য ছাড়া তার কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়া সম্ভব নয়। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হওয়ার তাওফিক প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) আমাকে বললেন, ‘মুয়াজ! আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে অসিয়ত করছি, তুমি যেন প্রতি নামাজের পর এই দোয়া করতে ভুলে না যাও—‘আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক’। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আপনার স্মরণ, কৃতজ্ঞতা ও উত্তম ইবাদতে আমাকে সাহায্য করুন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১৫২২; সুনানে নাসায়ি, হাদিস ১৩০৪)

নবীজি (সা.)-এর শেখানো বহু দোয়ায় আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার তাওফিক চাওয়ার শিক্ষা রয়েছে। আল্লাহ আমাদের তার কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে কবুল করুন। আমিন।