ইসলাম যেখানে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়

ইসলাম শান্তি, নম্রতা, ভদ্রতা, ক্ষমা, উদারতা, স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বিনয় এবং সহমর্মিতার প্রতি জোর দিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের শিক্ষা দিয়েছে। তবে প্রয়োজনে কঠোরতা অবলম্বনের নির্দেশনাও প্রদান করেছে। ইসলাম সাধারণত দ্বীনের স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোরতা প্রদর্শনের অনুমতি দেয়। তবে ব্যক্তি স্বার্থে কঠোরতা অবলম্বনের কোনো স্থান ইসলামে নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো ব্যক্তি স্বার্থে প্রতিশোধ নেননি বা অন্য কাউকে নিতে বলেননি; বরং ক্ষমা ও উদারতার নির্দেশ দিয়েছেন।

১. পরিবারকে দ্বীনের পথে আনতে কঠোরতা

পরিবারের সদস্যদের বিশেষত স্ত্রী ও সন্তানদের দ্বীনের পথে পরিচালিত করতে প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার কথা বলা হয়েছে। যেমন, শিশুদের সাত বছর বয়স থেকে নামাজের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং ১০ বছর বয়সেও অভ্যস্ত না হলে প্রয়োজনে শাসন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

“তোমরা শিশুকে সাত বছর বয়সে নামাজ শিক্ষা দাও এবং ১০ বছর বয়সে তা না মানলে প্রহার করো।”

(তিরমিজি, হাদিস: ৪০৭; আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪)

স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রথমে নরমভাবে বোঝানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরেও পরিবর্তন না হলে শয্যা পৃথক করে দেওয়া এবং প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

“পুরুষরা নারীদের কর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের একের ওপর আরেককে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং তাদের সম্পদ ব্যয় করে। আর যেসব নারীর অবাধ্যতার আশঙ্কা করো, তাদের উপদেশ দাও, শয্যা বর্জন করো এবং প্রয়োজনে তাদের প্রহার করো। যদি তারা অনুগত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কিছু করো না। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও মহান।”

(সুরা নিসা, আয়াত: ৩৪)

২. অন্যায় প্রতিহত করতে কঠোরতা

ইসলামের অন্যতম মৌলিক নীতি হলো অন্যায় প্রতিহত করা। আল্লাহ বলেন,

“তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজে বাধা দেবে।”

(সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

“যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় দেখবে, সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিহত করে। যদি না পারে, তবে কথা দিয়ে। আর তাও যদি না পারে, তবে অন্তরে ঘৃণা করবে। এটি ঈমানের দুর্বলতম স্তর।”

(মুসলিম, হাদিস: ৭৪)

৩. অপরাধের শাস্তি প্রদানে কঠোরতা

বিচারিক আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি প্রদানে কোনো গড়িমসি বা দয়া প্রদর্শনের সুযোগ নেই। আল্লাহ বলেন,

“ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী—তাদের প্রত্যেককে ১০০ বেত্রাঘাত করো। আল্লাহর বিধান কার্যকরণে তাদের প্রতি দয়া যেন প্রভাবিত না করে।”

(সুরা নুর, আয়াত: ২)

৪. নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোরতা

জান-মালের নিরাপত্তা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

“যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহীদ।”

(বুখারি, হাদিস: ২৪৮০; মুসলিম, হাদিস: ১৪১)

যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং তাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করার চেষ্টা চালায়, তাদের বিষয়ে কঠোর হওয়ার নির্দেশ রয়েছে। তবে যারা এমন কাজ করে না, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায়বিচার প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

“যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।”

(সুরা মুমতাহিনা, আয়াত: ৮)