আফগানিস্তানের সংবিধানে ইসলাম ও শরিয়া আইন: একটি পর্যালোচনা


যেকোনো দেশ দখলের পর সাধারণত দখলদার শক্তি ওই দেশের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে। আফগানিস্তানের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে, যা ১২টি অনুচ্ছেদ ও ১৬২টি ধারার সমন্বয়ে গঠিত। এই সংবিধান The Constitutional Loya Jirga-এর ৫০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধির অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তীতে, ২০০৪ সালের ২৬ জানুয়ারি, প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এই সংবিধানে স্বাক্ষর করেন এবং এটি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়।


ইসলাম ও গণতন্ত্রের সমন্বয়

নতুন সংবিধানে ইসলাম এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হয়েছে। এটি সংবিধানের ভূমিকা থেকেই স্পষ্ট। ভূমিকার শুরুতে রয়েছে একটি ধর্মীয় বক্তব্য:


> “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন, সালাত ও সালাম প্রেরিত নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং তার সাথি-সঙ্গী ও অনুসারীদের প্রতি।”

ভূমিকার প্রথম অনুচ্ছেদে ধর্মীয় বিশ্বাসকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে:


> “সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি অটল বিশ্বাস রেখে, তার ইচ্ছার প্রতি ভরসা করে এবং ইসলাম ধর্মকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে।”

অন্যদিকে, শেষ অনুচ্ছেদে আন্তর্জাতিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়েছে:


> “জাতিসংঘ সনদ ও মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।”


রাষ্ট্রের পরিচিতি ও ইসলামের প্রাধান্য

আফগান সংবিধানের প্রথম ধারায় রাষ্ট্রের পরিচিতি দেওয়া হয়েছে:

> “আফগানিস্তান একটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র।”

দ্বিতীয় ধারায় ঘোষণা করা হয়েছে, “ইসলাম ধর্ম আফগানিস্তানের রাষ্ট্রধর্ম,” তবে একই সঙ্গে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের তাদের ধর্মীয় আচার পালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, যা অবশ্যই আইনের আওতায় থাকতে হবে।


শরিয়া আইন এবং সংবিধানের সীমারেখা

আফগান সংবিধানের তৃতীয় ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:


> “আফগানিস্তানে কোনো আইন ইসলাম ধর্মের নীতিমালা ও আদেশের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হতে পারবে না।”

এরপর, সংবিধানের ধারা-১৩০-এ আরও নির্ধারণ করা হয়েছে যে, যদি কোনো মামলা নিষ্পত্তির জন্য লিখিত আইনে বিধান না থাকে, তবে বিচারকরা হানাফি ফিকহ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে, শিয়া সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে শিয়া ফিকহ প্রযোজ্য হবে।


ইসলাম ও রাষ্ট্রীয় প্রতীকসমূহ

সংবিধানের ১৯তম ধারায় আফগানিস্তানের জাতীয় প্রতীক নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতীকের শীর্ষে সংযোজন করা হয়েছে ধর্মীয় বাক্য:

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবার।”


২০তম ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংগীতে অবশ্যই “আল্লাহু আকবার” বাক্যটি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এটি স্পষ্ট যে ইসলাম আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় পরিচিতি, জাতীয় প্রতীক এবং জাতীয় সংগীতের কেন্দ্রে অবস্থান করছে।


সংবিধান ও শরিয়ার সাযুজ্য

তালেবান আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, আফগানিস্তানে “শরিয়া আইন দেশের লেনদেন ও কার্যক্রম পরিচালনার মূল ভিত্তি হবে।” এই ঘোষণার পেছনে একটি যৌক্তিক প্রশ্ন ওঠে: শরিয়া আইনের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ কোনো আইন কি আগে থেকেই ছিল?

আফগান সংবিধানের কাঠামো থেকে বোঝা যায়, আইন প্রণয়ন এবং বিচারিক কার্যক্রম উভয় ক্ষেত্রেই শরিয়া আইনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে:


1. “কোনো আইন শরিয়ার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হতে পারবে না।”

2. বিচারকরা শরিয়ার বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।


অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ধারা

অষ্টাদশ ধারায় নির্ধারণ করা হয়েছে, “হিজরি বর্ষপঞ্জি হবে রাষ্ট্রীয় বর্ষপঞ্জি এবং শুক্রবার রাষ্ট্রের সাপ্তাহিক ছুটির দিন।”

সপ্তম ধারায় সন্ত্রাসবাদ, মাদক চাষ ও পাচার বন্ধ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।


উপসংহার

আফগান সংবিধান স্পষ্টভাবে ইসলামিক মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক আইন ও গণতান্ত্রিক নীতিমালার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করেছে। তবে, শরিয়া আইনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের আধিপত্য নিশ্চিত করেছে।