আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের (৩৫) হত্যার ঘটনায় ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বাংলাদেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে হিন্দু উগ্রবাদী সংগঠন ইসকনের সাবেক নেতা এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও তার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। জামিন নামঞ্জুরের পরপরই পরিস্থিতি অরাজক হয়ে ওঠে। ইসকনের সমর্থকরা আদালত প্রাঙ্গণে ভাঙচুর চালায়, মসজিদে হামলা করে, নিরীহ মুসল্লিদের আক্রমণ করে এবং ধর্মীয় উস্কানিমূলক স্লোগান দেয়।
সংঘর্ষের সময় তারা চিন্ময় কৃষ্ণকে মুক্ত করার জন্য প্রিজনভ্যান আটকে রাখার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও গ্যাস গান ব্যবহার করে। এরই মধ্যে কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি আইনজীবী আলিফকে পাশের একটি গলিতে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি তোলে।
জামায়াতে ইসলামী নেতা ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, "এই হত্যাকাণ্ড একটি জঘন্য অপরাধ। একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণ এ অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ।"
হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, "ইসকনের কর্মী-সমর্থকরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে এবং আইনজীবী সাইফুল আলিফকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা মনে করি, ভারতের উসকানি ও মদদে এই অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।"
তারা আরও বলেন, "ইসকনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য এ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা জরুরি। আমরা শান্ত থেকেছি, কিন্তু মুসলমানদের ধৈর্যেরও সীমা আছে। সরকারের উচিত এ ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।"
নোবিপ্রবিতে বিক্ষোভ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তারা বলেন, "ভারত থেকে উস্কানি দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত চলছে। আমরা এসব ষড়যন্ত্র রুখে দেব এবং হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।"
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, "বাংলাদেশে সবসময় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে বিভাজিত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।"
এ ঘটনায় উত্তাল বাংলাদেশে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
0 Comments